আক্ষেপ , বাবার পরিপূর্ন সান্নিধ্য পাইনি; কিন্তু মহীয়সী আম্মা সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন !

আব্বা যখন বাজার করা থেকে অবসর নিলেন (৮২/৮৩ সাল,আমার তথাকথিত বয়স ৬-৭, যদিও আমি জানিনা আমাদের দৈনন্দিন বাজার কে করতেন), তখন আম্মা বল্লেন ইফতেখার তুই নুরু নীরুর সাথে যা, বাজারের সবক্টা ( ট্রেনিং) নে ! আমি ওনাদের সাথে ১/২ সপ্তাহ যাওয়ার পর মাছ, দুধ, কেরোসিন, খাঁটি সরিষার তেল,সব্জি, মসলা সব কিছু কেনা শিখে ফেল্লাম !

নুরু-নীরু ভাইদ্বয় মাছ কিন্তেন
খুব technic করে ! গাবরদেরকে manage করে কম দামে বেশী মাছ কিন্তে পারতেন; পরবর্তীতে আমি চেষ্টা করেছি সেই technology; কিন্তু সবসময় ফলপ্রসু হয়নি !

এরপর আম্মা আবু তাহেরের ছেলে ফারজুলকে আমার assistant (ডুলা, কেরোসিনের container, দুধের জগ বহন করার নিমিত্তে) বানিয়ে বাজারে পাঠানো শুরু করলেন ! কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আম্মার মন মতো বাজার করা শিখে ফেলি !

প্রতিদিন ৪-৫ সের দুধ (৫০ পয়সা-১ টাকা/ সের; মিষ্টির দোকানদার যেদিন দুধ কিন্তেন সেদিন ১-২ টাকা/সের) , টাটকা মাছ, খাঁটি সরিষার তেল, কুপি/ হারিকেনের কেরোসিন তেল প্রতিদিন কিন্তাম; বাজার থেকে এসে স্কুলে যেতাম ! আবার বিকালে প্রতিদিন আব্বার জন্য ১০ পিছ খাঁটি রসগোল্লা কিনতাম( আম্মা কখনো আব্বার এ রসগোল্লা আনা বন্ধ করেননি , যেহেতু আব্বা ভাত খেতেন না, শুধু দুধ, চা আর রসগোল্লা , এই ছিল আব্বার প্রতিদিনের খাবার !)

একেতো মোহন মাস্টার / ম্যাডামের শেষ কাডাইল্ল্যা, আবার কাউছার-বাহারের ছোট ভাই, আবার প্রতিদিন নগদ বাজার করি (বাকি কি জিনিস জানি না ); গ্রামের বাজারে শুভ হাল খাতা হতো ! দোকানদাররা বছরে একবার মাইক বাজিয়ে মিষ্টি খাইয়ে মানুষের কাছ থেকে বাকী টাকা আদায় করত; একদিন দেখি দোকানদার খলিল, রাখাল, ডিপু customer দের কার্ড দিচ্ছে, দাওয়াত দিচ্ছে, আমাকে দেয় না ; আমার মন খারাপ! তখন ওনারা বুঝিয়ে বল্লেন! আমাদের কোন বাকী নাই তাই মিষ্টিও নাই ! হায়রে শুভ হাল খাতা !

এর পুরস্কার স্বরুপ আম্মা আমাকে নবীনগর নিতেন আরও বর পরিসরের বাজার করার জন্য !

আম্মা আর আমি শহীদ মাঋিকে নিয়ে খুব ভোরে বের হতাম; নৌকাতে আমরা মা-ছেলে নাস্তা খেতাম ; নৌকাতে খাওয়া যে কি feelings, …অসাধারন ! তোমরা যারা খাওনি জীবন বৃথা !

 

ইফতেখারের সেইম জায়গায় শেফালী আপা নৌকার সামনে থেকে পরে যায় , সাথে সাথে নানা পকেটে টাকা , কাগজ সহ পানিতে পরে আপাকে বাঁচায় ,
তাহলে বুঝা গেল ঐ ব্রীজটা আমাদের পরিবারের জন্য বিপদসংকুল স্থান

Dr Shariful Islam

আরেকবার চতুরংগখোলার এক ছেলে নাম মনে হয় শিশির আব্বার ক্লাশে হয় পড়া পারে নাই বা আব্বার উদ্দেশ্যে দুস্টামী করে হয়ত কিছু বলছিল , আব্বা সাথে সাথে লাইব্রেরী থেকে দুইটা বেত এনে ক্লাসের সবাইকে বের করে দরজা বন্ধ করে এই যে পেটানো শুরু করল , আমরা শুধু বাহির থেকে “ অ মাগো , অ মাগো” আওয়াজ শুনতেছি , পরে মনে হয় আজিজ মাস্টার ( খুশুর জামাই ) নানা , নানা বলে আব্বাকে শান্ত করে ।
ঐ শিশিরের মনে হয় এখনও আব্বার কথা শুনলে গায়ে জ্বর আসে

আব্বাকৈ আমি অনৈক বকা দিতাম কথা শুনতাম

Mili Afrin

আসলে মেয়েরা ঘরের লক্ষী; মেয়েরা ঘরের প্রান….

মিলি শাহপুরে থাকাকালীন বাড়িটাকে আনন্দে রাখত;

আবার মিরপুরেও মিলি সদা সর্বদা বাড়িটাকে প্রানোজ্জল করে রাখত…

শিউলি আপার absence এ পিন্টুর আপাদমস্তক যত্ন মিলি করত ! হায়রে পিন্টু ! খালারে আমৃত্তু ভুলিস না !

সেগুলো ভুলার নয়

আজকে ওরে শেষ করে ফেলব !

আরেক দিন; আব্বা শিশু শ্রেনীর ক্লাস
(আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মৌ
এত ডাকি তবুও কেন
কওনা কথা বউ)

শেষ করে বাড়িতে এসে বিস্রাম নিচ্ছিলেন; মিলিকে ডুবাচাইলের কুদ্দুস স্যার পড়া না পারার জন্য বেত্রাঘাত করল; এমন সময় মিলি কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসল; আব্বা শুনা মাত্র খন্তি হাতে নিয়ে স্কুলের দিকে দৌড়াচ্ছেন আর বলছেন কুদ্দুসের এত বড় সাহস আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলে; আজকে ওরে শেষ করে ফেলব !

মিলিকে আব্বা অনেক আদর করতেন !

আল্লাহ আব্বার ভুল গুলো ক্ষমা করে দাও